|| World Measurement Day || বিশ্ব পরিমাপ দিবস ||

World Measurement Day, বিশ্ব পরিমাপ দিবস, world measurement day 2020
 World Measurement Day
আমি যদি কোনও বাচ্ছাকে বলি, আমার কাছে একটা খুব লম্বা চকোলেট আছে তাহলে পরের প্রশ্নটি অবধারিত, “কতটা লম্বা?” এখন, বাচ্ছাকে নাহয় বলা যেতে পারে যে, “দুই হাত লম্বা” এবং সেও সেটা নিয়েই খুশি থাকবে। কিন্তু, বিজ্ঞানে তো সেটা চলে না। আমার দুই হাত মানে যতটা দৈর্ঘ্য বাচ্ছাটির দুই হাত মানে নিশ্চয় ততটা নয়। তাহলে উপায়?

একক (Units)-এর ধারণা:-

ঠিক এই সমস্যার সমাধানের জন্যেই বিজ্ঞানীরা ‘একক’ (Units)-এর ধারণা আনলেন। অর্থাৎ, কিছু একটাকে মাপকাঠি (Standard) ধরে নিয়ে তার উপর ভিত্তি করে সমজাতীয় ক্ষেত্রে (Similar cases) পরিমাপ করা। দৈর্ঘ্যের একক ধরা হল সেন্টিমিটার (centimeter), ভরের একক গ্রাম (gram) এবং সময়ের একক সেকেন্ড (second)। এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হল তিনটি এককের আদ্যাক্ষরকে মাথায় রেখে- cgs পদ্ধতি। কিন্তু এতেও ওই একইরকমের সমস্যাই রয়ে গেল। কোনও আন্তর্জাতিক মাপকাঠি না থাকার দরুন আমার দেশের এক সেমি হয়ে যেতে পারে পাশের দেশের দশ সেমি। ফের শুরু হল চিন্তাভাবনা। ২০ই মে ১৮৭৫ সালে গঠন হল ওজন এবং পরিমাপ সংক্রান্ত বিশ্ব সংস্থা বা International Bureau of Weights and Measures (ফরাসী ভাষায় Bureau international des poids et mesures বা সংক্ষেপে BIPM)। সমগ্র বিশ্বের জন্য একক নির্ধারণ করা এবং সেগুলোর যথাযোগ্য ব্যবহার হওয়া নিশ্চিত করা হল এই সংস্থার কাজ। পালটে গেল এককের সংজ্ঞা- দৈর্ঘ্যের একক হল মিটার (meter), ভরের একক কিলোগ্রাম (kilogram) এবং সময়ের একক সেকেন্ডই থাকলো। এই নতুন পদ্ধতির নাম হল mks অথবা SI (International Standard) পদ্ধতি।

সংজ্ঞা নির্ধারণ:-

সংস্থা গঠনের পর তাদের উপর দায়িত্ব পড়লো সংজ্ঞা নির্ধারণ করার। একটি সংকর ধাতুর (alloy) পাত নির্মাণ করা হল ৯০% প্ল্যাটিনাম এবং ১০% ইরিডিয়াম দ্বারা। বলা হল, বরফ গলে যাওয়ার উষ্ণতায় এই পাতের উপর চিহ্নিত দুটি রেখার মধ্যবর্তী দূরত্বকে বলা হবে এক মিটার দূরত্ব। কিন্তু এমন একটা বস্তুকে বয়ে বেড়ানো বড় ঝক্কির কাজ। এর মধ্যে, ১৮৯৩ সালে মাইকেলসন তাঁর যন্ত্রের সাহায্যে বিশেষ কয়েকটি বর্ণের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য মাপতে সক্ষম হলেন। ১৯৮৩ সালে সপ্তদশ বৈঠকে গৃহীত হল নতুন সংজ্ঞা- এক সেকেন্ডের ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ ভাগের এক ভাগ সময়ে আলো শূন্যস্থানে যতটা দুরত্ব অতিক্রম করে তাকে বলা হবে এক মিটার দূরত্ব। বর্তমানে, আমরা এই সংজ্ঞাই ব্যবহার করি। এ তো গেল দূরত্ব। এবার আসা যাক ভরের পরিমাপ সম্পর্কে। বলা ভালো, ভর বলতে বোঝায় যে, একটি বস্তু যতটা পরিমাণ পদার্থ দ্বারা গঠিত। ১৮৮৯ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থা বানিয়ে ফেলল একটা প্ল্যাটিনাম- ইরিডিয়াম সংকর দ্বারা নির্মিত বেলনাকার বস্তু। তিনটি কাঁচের পাত্র দ্বারা সুরক্ষিত এই বস্তুটির ভরকেই বলা হল এক গ্রাম। ১৯৮৩ সালে যখন মিটারের সংজ্ঞা পরিবর্তিত হল তখন কিলোগ্রামের সংজ্ঞা পাল্টানোর দরকার পড়লো। অবশেষে গত বছর, ২০১৯ এর ২০ই মে কিলোগ্রামের সংজ্ঞা পালটে গেল। এখনকার সংজ্ঞায় মান্যতা পায় প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, যার মান ৬.৬২৬০৭০১৫ X ১০^-৩৪ এবং এর একক হল কিলোগ্রাম বর্গমিটার প্রতি সেকেন্ড (kg⋅m^2/s)। মিটার কাকে বলে আমরা আগেই জেনে গেছি। কিন্তু প্রশ্ন এই যে, সেকেন্ড তাহলে কীভাবে নির্ধারণ করবো? প্রথমদিকে সেকেণ্ডের সংজ্ঞা দেওয়া হয় এভাবে- এক সৌরদিন, অর্থাৎ ২৪ ঘন্টার ৮৬,৪০০ ভাগের একভাগ সময় হল এক সেকেন্ড। কিন্তু এতেও বিস্তর ঝক্কি রয়ে যায়। ১৯৬৭ সালে ত্রয়োদশ সম্মেলনে আণবিক পদার্থবিদ্যার সাহায্যে সেকেন্ডের সংজ্ঞা নির্ধারিত করা হল। একটি সিজিয়াম-১৩৩ অণু ৯,১৯২,৬৩১,৭৭০ বার বিকিরণ সম্পুর্ণ করে যতটা সময়ে তা হল এক সেকেন্ড। 

এইভাবে সেকেন্ডের সংজ্ঞা দেওয়ার ফলে একটা মজার সমস্যা সৃষ্টি হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব ঘড়ি ব্যবহার হয় আর আণবিক যে ঘড়ির কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে ফারাক আছে। এছাড়া, পৃথিবীর ঘূর্ননের হারও বদলাতে থাকে। সেকারণেই সার্বজনীন তুল্য সময় (Universally Coordinated Time, UTC) এর সাথে প্রতি বছর শেষে এক সেকেন্ড সময় মাঝেমধ্যে যোগ করতে হয়, তাত্ত্বিকভাবে বিয়োগেরও প্রয়োজন হতে পারে।

এতকিছুর পরে একটা প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা দরকার- প্ল্যাটিনাম ইরিডিয়াম সংকর কেন? উত্তরটা সহজ। এই দুই ধাতুই অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে না। তাপমাত্রার পরতিবর্তনে এদের আকার বৃদ্ধি বা হ্রাস হয়না সহজে। সেজন্যেই এমন একটা সংকর ধাতুর ব্যবহার হয়েছিল। এই কাজ করার জন্যে যে গবেষণা করা হয়েছিল তার ফলে পরবর্তীকালে বহু সংকর ধাতু প্রস্তুত করা সম্ভব হয়। বর্তমানে BIPM এর সভাপতি (Director) হলেন মার্টিন মিলটন (Martin J. T. Milton)। প্রতি বছর BIPM এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে ২০ই মে ‘বিশ্ব পরিমাপ দিবস’ (International Metrology Day) রূপে পালিত হয়। এবছরের মূল ভাবনা- বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাপ (Measurement for Global Trades)।
Previous Post Next Post