|| Benefits and nutritional value of Taro Tree || কচু শাকের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ ||
Taro Tree |
কচুর ইংরেজি হলো Taro এবং কচুগাছের ইংরেজি হলো Taro tree. ধারণা করা হয় কচুগাছের আদি নিবাস ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। প্রায় দু হাজার বছর আগেও কচু চাষ করা হতো। কচুগাছের পাতাকেই শাক হিসেবে খাওয়া হয়। কচুগাছের মূলত সবকিছুই ভক্ষণযোগ্য। কচুগাছের মূলেই আসলে কচু থাকে। এটাকে সাধারণত কচু মুখী বা মুখী কচু বলা হয়ে থাকে। কচুগাছের মূল ও পাতা ছাড়াও এর ডাল, কান্ড - সবই খাওয়া হয়। ইলিশ ও চিংড়ি মাছ দিয়ে কচুর তরকারি খুবই জনপ্রিয়।
কচুর প্রকারভেদ:-
কচু মাটিতে ও জলে দু স্থানেই বেশ সহজেই জন্মাতে পারে। তবে মাটিতে জন্ম নেয়া কচুর সংখ্যাই বেশি। অনেক প্রজাতির কচু আছে যেগুলো বনে জঙ্গলে জন্মে থাকে। এগুলো বুনো কচু নামে পরিচিত। এ ধরনের কচু মানুষের খাওয়ার নয়। মানুষের খাওয়ার উপযোগী জাতের ভেতরে কচু, দুধ কচু, মান কচু, পানি কচু, পঞ্চমমুখী কচু ও ওল কচু উল্লেখযোগ্য। কচুর মূল, লতি, পাতা ও ডাটা প্রায় সব অংশই খাওয়াই উপযোগী।
উপকারিতা:-
কচু শাকে ভিটামিন এ. ডি এবং প্রচুর পরিমাণে লৌহ আছে। যা মানব দেহের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকেই মনে করেন, কচু খাওয়া বেশ ঝামেলার কাজ। তাই অন্য সব সবজি খেলেও কচু এড়িয়ে চলেন অনেকেই। গ্রামের বাড়ির আনাচে-কানাচে ও রাস্তার পাশে অনেক জায়গায় কচু জন্মায়। তবে অনেক প্রকারের কচু আছে যা যত্নের সাথে চাষ করা হয়ে থাকে। আর এ ধরনের চাষ করা কচুই আমরা নানা ধরনের রান্নায় ব্যবহার করে থাকি।কচু শাকের গুণাগুণ:-
১. কচুর শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও লৌহ। ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য রাতকানা প্রতিরোধ করে আর ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুর শাক খাওয়ানো উচিত।
১. কচুর শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও লৌহ। ভিটামিন এ জাতীয় খাদ্য রাতকানা প্রতিরোধ করে আর ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুর শাক খাওয়ানো উচিত।
২. কচুতে আছে আয়রন, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যাদের রক্তশূন্যতা আছে তারা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন।
৩. কচুতে আছে নানা রকমের ভিটামিন যা গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্ম ধারণ উপকারী। কচু দামেও বেশ সস্তা, তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য কচু খেতে পারেন।
৪. কচুর ডাটায় প্রচুর পরিমাণে জল থাকে, তাই গরমের সময় কচুর ডাটায় রান্না করে খেলে শরীরের জলের ঘাটতি পূরণ হয়।
৫. কচুর শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ থাকে যা হজমে সহায়তা করে।
৬. জ্বরের সময় রোগীকে দুধ কচু রান্না করে খাওয়ালে জ্বর দ্রুত ভালো হয়।
৭. কচুতে আছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও খায়ামিন, যা মানব শরীরের জন্য অনেক দরকারি উপাদান।
৮. কচু খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের ওল কচুর রস বেশ উপকারী।
৯. নিয়মিত কচু খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
১০. কচুতে আছে অক্সলেট নামক উপাদান। তাই কচু শাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত।
পুষ্টিকর উপাদান (প্রতি ১০০ গ্রামে):-
খাদ্যশক্তি- ৪২ কিলোক্যালরি
শর্করা- ৬.৭ গ্রাম
চিনি- ৩ গ্রাম
খাদ্যআঁশ- ৩.৭ গ্রাম
চর্বি- ০.৭৪ গ্রাম
আমিষ- ৫ গ্রাম
ভিটামিন এ- ২৪১ আইইউ
বিটা ক্যারোটিন- ২৮৯৫ আইইউ
থায়ামিন- ০.২০৯ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন- ০.৪৫৬ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন- ১.৫১৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬- ০.১৪৬ মিলিগ্রাম
ফোলেট- ১২৬ আইইউ
ভিটামিন সি- ৫২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে- ১০৮.৬ আইইউ
ক্যালসিয়াম- ১০৭ মিলিগ্রাম
আয়রন- ২.২৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম- ৪৫ মিলিগ্রাম
ম্যাংগানিজ- ০.৭১৪ মিলিগ্রাম
ফসফরাস- ৬০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম- ৬৪৮ মিলিগ্রাম
জিংক- ০.৪১ মিলিগ্রাম
কার্যক্ষমতা:-
নানান গুণের আধার কচুশাক আমাদের শরীরকে সুস্থ্য ও সবল রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদন করে। যেমন -
১. এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, যা দেহের বৃদ্ধি ও কোষ গঠনে ভূমিকা রাখে। এর বিভিন্ন ভিটামিন কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করে।
২. কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, যা অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রোগ দূরে রাখে, পরিপাক ক্রিয়া দ্রুত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৩. এর আয়রন ও ফোলেট রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহনও পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্ত জমাটবাঁধার সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৪. কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাংগানিজ। দাঁত ও হাড় গঠনে ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে এসব উপাদানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. রাতকানা, ছানিসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ও দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে কচুশাক অতুলনীয়।