|| Gorakshini Sabha & Vivekananda || গোরক্ষিনী সভা এবং বিবেকানন্দ ||

Gorakshini Sabha a& Vivekananda, গোরক্ষিনী সভা এবং বিবেকানন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ ও গোরক্ষিণী সভার সম্পাদকের কথোপকথন
স্বামী বিবেকানন্দ

গোরক্ষিণী সভার জনৈক উদ্যোগী প্রচারক স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে উপস্থিত হইলেন। প্রচারক স্বামীজীকে অভিবাদন করিয়া গোমাতার একখানি ছবি উপহার তাঁহাকে দিলেন। স্বামীজী উহা হাতে লইয়া নিকটবর্তী অপর এক ব্যক্তির হাতে দিয়া তাহার সহিত নিম্নলিখিত আলাপ করিয়াছিলেন:

আলাপ:-

স্বামীজি : আপনাদের সভার উদ্দেশ্য কি?

প্রচারক : আমরা দেশের গোমাতাগণকে কসাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করিয়া থাকি। স্থানে স্থানে পিঞ্জরাপোল স্থাপন করা হইয়াছে - সেখানে রুগ্ন, অকর্মণ্য এবং কসাইয়ের হাত হইতে ক্রীত গোমাতাগণ প্রতিপালিত হয়।

স্বামীজি : অতি উত্তম কথা। আপনাদের আয়ের পন্থা কি

প্রচারক : দয়াপরবশ হইয়া আপনাদের ন্যায় মহাপুরুষ যাহা কিছু দেন, তাহা দ্বারাই সভার ঐ কার্য নির্বাহ হয়।
 
স্বামীজী : আপনাদের গচ্ছিত কত টাকা আছে?

প্রচারক : মাড়োয়ারী বণিকসম্প্রদায় এ কার্যের বিশেষ পৃষ্ঠপোষক। তাঁহারা এই সৎকার্যে বহু অর্থ দিয়াছেন।

স্বামীজী : মধ্য-ভারতে এবার ভয়ানক দুর্ভিক্ষ হয়েছে। ভারত গভর্মেন্ট ৯ লক্ষ লোকের অনশনে মৃত্যুর তালিকা প্রকাশ করেছেন। আপনাদের সভা এই দুর্ভিক্ষকালে কোন সাহায্যদানের আয়োজন করেছে কি?

প্রচারক : আমরা দুর্ভিক্ষাদিতে সাহায্য করি না। কেবলমাত্র গোমাতৃগণের রক্ষাকল্পেই এই সভা স্থাপিত।

স্বামীজী : যে দুর্ভিক্ষে আপনাদের জাতভাই লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হলো, সামর্থ্য সত্বেও আপনারা এই ভীষণ দুর্দিনে তাদিগকে অন্ন দিয়ে সাহায্য করা উচিত মনে করেননি?

প্রচারক : না; লোকের কর্মফলে - পাপে এই দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। যেমন কর্ম তেমনি ফল হইয়াছে।

প্রচারকের কথা শুনিয়া স্বামীজীর বিশাল নয়নপ্রান্তে যেন অগ্নিকণা স্ফুরিত হইতে লাগিল; মুখ আরক্তিম হইল। কিন্তু মনের ভাব চাপিয়া বলিলেন, "যে সভা-সমিতি মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে না, নিজের ভাই অনশনে মরছে তা দেখেও তার প্রাণরক্ষার জন্য একমুষ্টি অন্ন না দিয়ে পশু-পক্ষী রক্ষার জন্য রাশি রাশি অন্ন বিতরণ করে, তার জন্য আমার কিছুমাত্র সহানুভূতি নেই - তা দ্বারা সমাজের বিশেষ কিছু উপকার হয় বলে আমার বিশ্বাস নেই। কর্মফলে মানুষ মরছে - এরূপে কর্মের দোহাই দিলে জগতে কোন বিষয়ের জন্য চেষ্টা-চরিত্র করাটাই একেবারে বিফল বলে সাব্যস্ত হয়। আপনাদের পশুরক্ষা কাজটাও বাদ যায় না। এই কাজ সম্বন্ধে ও বলা যেতে পারে - গোমাতারা আপন আপন কর্মফলেই কসাইদের হাতে যাচ্ছেন ও মরছেন, আমাদের উহাতে কিছু করবার প্রয়োজন নেই।"

প্রচারক একটু অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন, " হ্যাঁ, আপনি যা বলেছেন তা সত্য, কিন্তু শাস্ত্র বলে - গরু আমাদের মাতা।"

স্বামীজি হাসিতে হাসিতে বলিলেন, "হ্যাঁ, গরু আমাদের যে মা, তা আমি বিলক্ষণ বুঝেছি - তা না হলে এমন সব কৃতী সন্তান আর কে প্রসব করবেন?"
Previous Post Next Post